রৌদ্র লেখে জয়
শামসুর রাহমান
বর্গি এলো খাজনা নিতে,
মারল মানুষ কত |
পুড়ল শহর, পুড়ল শ্যামল
গ্রাম যে শত শত।
হানাদারের সঙ্গে জোরে
লড়ে মুক্তিসেনা,
তাদের কথা দেশের মানুষ
কখনো ভুলবে না।
আবার দেখি নীল আকাশে
পায়রা মেলে পাখা;
মা হয়ে যায় দেশের মাটি,
তার বুকেতেই থাকা।
কাল যেখানে আঁধার ছিল
আজ সেখানে আলো।
কাল যেখানে মন্দ ছিল,
আজ সেখানে ভালো।
কাল যেখানে পরাজয়ের
কালো সন্ধ্যা হয়,
আজ সেখানে নতুন করে
রৌদ্র লেখে জয়।
১. কবিতার মূলভাব জেনে নিই ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি জয়লাভ করে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' নামে এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। আগে এ দেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হয়েছিলেন। এই কবিতায় পাকিস্তানিদের অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন এদেশের সন্তানেরা সংগ্রাম করেছিল সে কথাও বলা হয়েছে ।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
বর্গি হানাদার খাজনা
৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
হানাদারদের বর্গি খাজনা
ক. সরকারকে……………………………..দেওয়া সকল নাগরিকের কর্তব্য।
খ. বহু পূর্বে বাংলায়……………….এসে হানা দিত, মানুষ মারত, ধনসম্পদ লুট করত ।
গ. …………………………পরাজিত করেই মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।
৪. নিচের কথাগুলো বুঝে নিই ।
ক. বর্গি এলো খাজনা নিতে, মারল মানুষ কত।
-- ‘খাজনা নিতে’ অর্থ লুটতরাজ করত। বর্গিরা বাংলাদেশে এসে মানুষ মেরে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে বাঙালির ধনসম্পদ নিয়ে পালিয়ে যেত ।
খ. তাদের কথা দেশের মানুষ কখনো ভুলবে না ৷
-- মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মানুষ কখনো ভুলবে না, কারণ তাঁরাই হানাদার পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের এদেশ থেকে তাড়িয়েছিলেন ।
গ. মা হয়ে যায় দেশের মাটি, তার বুকেতেই থাকা।
-- মা ও মাতৃভূমি সমান গর্বের, সমান আনন্দের। জননীহীন সন্তান যেমন দুর্ভাগা, যার মাতৃভূমি নেই সেও তেমনি ভাগ্যহীন।
৫. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে মুখে বলি ও লিখি।
ক. বর্ণি কারা? তারা কী করেছিল?
খ. হানাদারদের কথা মানুষ কেন ভুলবে না?
গ. মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মানুষ কখনো ভুলবে না কেন ?
ঘ. মুক্তিসেনারা কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল এবং কেন? ৩. 'কাল যেখানে আঁধার ছিল আজ সেখানে আলো। - কথাটি ব্যাখ্যা
করি।
৬. বিপরীত শব্দ জেনে নিই। খালি জায়গায় ঠিক শব্দ বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
আঁধার আলো কালো সাদা ভালো মন্দ জয় পরাজয় সকাল সন্ধ্যা
ক. বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজ দলের …………………………………………………………….. দেখে ছেলেটি আনন্দে নেচে উঠলো।
খ. একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা ......……………………… ব্যাজ পরে শহিদ মিনারে যাই।
গ. ………………………............. হওয়ার আগেই আমরা বাড়ি পৌঁছে যাব ।
ঘ. ................. নামলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে কিছুই দেখা যায় না ।
ঙ. ………………………ছেলের সঙ্গ ত্যাগ করাই উত্তম।
৭. কবিতাটি আবৃত্তি করি ও না দেখে লিখি।
৮. কৰ্ম-অনুশীলন।
পাঠ্যবইয়ের বাইরের কোনো কবিতা বা ছড়া পড়ে তা শ্রেণিতে আবৃত্তি করি।
কবি-পরিচিতি
কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে অক্টোবরে পুরানো ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃিক নিবাস নরসিংদী জেলার পাড়াতলী গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রধান কবি। ছোটদের জন্য তিনি অনেক ছড়া, কবিতা ও স্মৃতিকথা লিখেছেন। 'এলাটিং বেলাটিং', 'ধান ভানলে
কুঁড়ো দেবো', 'স্মৃতির শহর ঢাকা' ইত্যাদি ছোটদের জন্য লেখা তাঁর বিখ্যাত বই। তিনি ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরও দেখুন...